পরবর্তী বৈদিক যুগে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন আলোচনা


 বৈদিক সভ্যতা ভারতীয় আর্যদের সৃষ্টি। আর্য বলতে কোনো জাতিকে বোঝায় না। আর্য হল এক প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠী। গ্রিক, হিব্রু, ল্যাটিন, সংস্কৃত, ইরানীয় এই পাঁচটি ভাষাকেই আর্য বলা হয়। সংস্কৃত ভাষাভাষী আর্যরা আনুমানিক দেড় হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে বৈদিক সভ্যতার সূত্রপাত করেন। বৈদিক সভ্যতা বা বৈদিক যুগ দুটি ভাগে বিভক্ত। যথা-(ক) আদি বৈদিক বা ঋক বৈদিক যুগ ও (খ) পরবর্তী বৈদিক যুগ।

 পরবর্তী বৈদিক যুগ: পরবর্তী বৈদিক যুগের সময়সীমা হিসাবে ধরা হয় অঅনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বকে। এই সময় আর্যদের সামগ্রিক জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন ঘটেছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হল

(১) সমাজজীবন: পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সমাজজীবন নিম্নে আলোচনা করা হল-

(ক) নগরের অস্তিত্ব: ঋকবৈদিক যুগের মতো পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যগণ গ্রামবাসী থাকলেও নগর গড়ে উঠেছিল। রাজা ও অভিজাত সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিগণ নগরের প্রাসাদে বাস করত।

(খ) বর্ণভেদের কঠোরতা: পরবর্তী বৈদিক যুগে সামাজিক জীবনে বর্ণপ্রথাদ্ধ কঠোর রূপ নেই। ঋক বৈদিক যুগে গড়ে ওঠা পেশাভিত্তিক বর্ণপ্রথা পরবর্তী বৈদিক যুগে জাতিভিত্তিক ও বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে। সমাজে ব্রাহ্মাণ ও ক্ষত্রিয়। সম্প্রদায় যথেষ্ট মর্যাদার অধিকারী হলেও বৈশ্য ও শূদ্ররা অস্পৃশ্য বলে পরিগণিত। হয়।

(গ) নারীর স্থান: পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজে নারীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এই যুগে নারীরা ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ এং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অধিকার। হারিয়ে ছিল। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা, সতীদাহপ্রথা ইত্যাদির শিকার হতে হয়েছিল নারীদেরকে। সম্পত্তির অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়।

(ঘ) সামাজিক অসাম্য: পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজে অর্থনৈতিক অসাম। বৃদ্ধি পায়। জমির ওপর দখল ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে নানা বিরোধ দেখা দিতে থাকে। ফলে কিছু সম্পত্তিশালী মানুষ ধনী ও বাকিরা দরিদ্ররূপে। সমাজে চিহ্নিত হয়।

(ঙ) অন্যান্য: পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজে চতুরাশ্রম প্রথা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়। খাদ্য তালিকায় মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গোহত্যা সমাজে নিন্দনীয় কাজ বলে বিবেচিত হয়। পোশাক পরিচ্ছদে যথেষ্ট স্বচ্ছলতার ছাপ দেখা দেয়। চটি, জুতো, আয়না, চিরুনি প্রভৃতির ব্যবহার শুরু হয়। সমাজে সংগীতের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

(২) রাজনৈতিক জীবন: পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের রাজনৈতিক জীবন নিম্নে আলোচন করা হল-

(ক) রাজার শক্তিবৃদ্ধি: পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি। পায় এবং তারা দৈবত্বের দাবি করতে থাকেন। শতপদ ব্রাহ্মণে বলা আছে যে, রাজা হলেন প্রজাপতি ব্রহ্মার সাক্ষাৎ প্রতিনিধি। ব্রাহ্মণ ছাড়া সবার উপর। রাজার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ইচ্ছামতো মানুষের উপর অত্যাচার করতে পারতেন এবং শূদ্রকে হত্যা করতে পারতেন।

(খ) সাম্রাজ্যবাদের সূচনা: পরবর্তী বৈদিকযুগে রাজারা অন্যের রাজ্য দখল। করে নিজ সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি করার জন্য সর্বদা যুদ্ধবিগ্রহ করতেন। এই যুগে আর্যসভ্যতা পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে সম্প্রসারিত হয়েছিল।

(গ) সভা ও সমিতি: বৈদিক যুগের মতো পরবর্তী বৈদিক যুগেও সভাও সমিতি ছিল। তবে এই যুগে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবার জন্য সভা সমিতি তাদের পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলেছিল।

(ঘ) রাজকর্মচারী: পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধির ফলে বহু নতুন কর্মচারী শাসনক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়। এই সব নতুন রাজকর্মচারীরা হল-পুরোহিত বা প্রধানমন্ত্রী, সেনাধ্যক্ষ বা প্রধান সেনাপতি, সংগ্রাহিনী বা কোষাধ্যক্ষ, দূত বা রাজার ঘোষক, ভাগদুখ বা কর আদায়কারী প্রমুখ।

(ঙ) কর বা রাজস্ব: পরবর্তী বৈদিক যুগে জনসাধারণের উপর বাধ্যতামূলক ভাবে কর আরোপ করা হয়। ব্রাহ্মণ ও রাজপরিবারের সদস্যদের কোনো কর দিতে হত না।

(চ) বিচারব্যবস্থা: পরবর্তী বৈদিকযুগে রাজা স্বয়ং ছিলেন বিচারবিভাগের সর্বময় কর্তা। তবে তার নামে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন অধ্যক্ষ, গ্রাম্যবাদীন প্রমুখ। কিন্তু রাজা নিজে ছিলেন বিচারের উর্ধ্বে।

(৩) অর্থনৈতিক জীবন: পরবর্তী বৈদিকযুগে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবন নিম্নে আলোচনা করা হল-

(ক) কৃষি: পরবর্তী বৈদিক যুগে কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটেছিল। উন্নত কৃষির প্রয়োজনে সার ও সেচ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। কৃষির স্বার্থে গোসম্পদ সংরক্ষণের উপর বিশেষ নজর রাখা হত। যজ্ঞ ছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ গোহত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হত।

(খ) শিল্প: পরবর্তী বৈদিকযুগে শিল্পের উন্নতি ঘটেছিল। উন্নত জীবন যাত্রার উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে নানা ধরনের শিল্প যেমন বয়নশিল্প, চর্মশিল্প, ধাতুশিল্প প্রভৃতির প্রসার ঘটে। মৃৎশিল্পে চার ধরনের মৃৎপাত্রের উদ্ভব হয়-লালপাত্র, লাল-কালো পাত্র, কালো পাত্র ও ধূসর বর্ণের কারুকার্যময় মৃৎপাত্র।

(গ) ব্যবসা বাণিজ্য পরবর্তী বৈদিকযুগে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটেছিল। বৈশ্যরা আভ্যন্তরীন ও সমুদ্র বাণিজ্যের মাধ্যমে যথেষ্ট সম্পদের অধিকারী হয়েছিল। চীন, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সমুদ্র বাণিজ্য চলত। বাণিজ্যিক স্বার্থ ও বণিকদের পারস্পরিক নিরাপত্তার জন্য গিল্ড গড়ে উঠেছিল। বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে কৌশাম্বী, হস্তিনাপুরের মতো নগরের উদ্ভব ঘটেছিল।

(৪) ধর্মীয় জীবন: পরবর্তী বৈদিকযুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবন নিম্নে আলোচনা করা হল-

(ক) পুরোহিত শ্রেণির প্রাধান্য: পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনে পুরোহিত শ্রেণির প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। এই যুগে কাজের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে পুরোহিতদের মধ্যে চারটি শ্রেণির সৃষ্টি হয়। যথা-আহ্বায়ক, গায়ক, সংস্কারক, পুরোহিত।

(খ) আনুষ্ঠানিক জটিলতা বৃদ্ধি: পরবর্তী বৈদিকযুগে আর্যদের ধর্মীয় আচার আচরণ ও অনুষ্ঠানের জটিলতা বৃদ্ধি পায়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি খুবই ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। যাগযজ্ঞের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারীরা আর আগের মতো।

অংশগ্রহণ করতে পারত না।

(গ) দেবদেবীর জনপ্রিয়তা পরিবর্তন: ঋকবৈদিক যুগে ইন্দ্র ও অগ্নির জনপ্রিয়তা পরবর্তী বৈদিকযুগে হ্রাস পায়। সেই জনপ্রিয়তার স্থান গ্রহণ করেন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, রক্ষাকর্তা বিষ্ণু ও পশুরাজ রুদ্র। এই যুগে শূদ্র ও বৈশ্যদের। পৃথক দেবতা ছিল বলে মনে করা হয়।

(ঘ) পুনর্জন্মবাদের সূচনা: পরবর্তী বৈদিকযুগে মানুষ কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে। বিশ্বাস করতে শুরু করে। তারা বিশ্বাস করতে থাকে যে কর্মফল থেকেই। মানুষের সুখ দুঃখ সৃষ্টি হয়। এই সুখ দুঃখ ভোগ করার জন্যই মানুষের পুনর্জন্ম ঘটে।

(ঙ) অলৌকিকতার প্রভাব: পরবর্তী বৈদিক যুগে ধর্মে তান্ত্রিক ক্রিয়া, যাদু, ইন্দ্রজাল প্রভৃতি অলৌকিতা প্রবেশ করেছিল।

 মূল্যায়ন: পরবর্তী বৈদিকযুগে আর্যদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে যে পরিবর্তনগুলি ঘটেছিল তা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক বা তার পরবর্তী কালের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল।

 প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন কী। এই আন্দোলনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয়-দার্শনিক কারণ আলোচনা করো।

জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

 বৈদিক আর্যদের সরল, অনাড়ম্বর ধর্ম বৈদিক যুগের শেষভাগে ব্রাহ্মণ শ্রেণির কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। তাই এই সময়ের বৈদিক ধর্মকে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম বলা হয়। ভক্তি, উপাসনা, ধর্মপরায়ণতা প্রভৃতির পরিবর্তে মন্ত্রপাঠ, পশুবলি, যাগযজ্ঞের বাহুল্য, প্রচুর দক্ষিণা-এই ধর্মের প্রধান অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পূর্বভারতে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

 কারণ সমূহ: ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে ওঠার পেছনে যে সমস্ত সামাজিক-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয়-দার্শনিক কারণ কাজ করেছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হল।

(ক) সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন গড়ে ওঠার পিছনে সামাজিক কারণ ছিল। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সামাজিক মান মর্যাদার সর্বোচ্চ স্থানে বিরাজমান ছিল। যজমানি ও শিক্ষাদান করে তারা প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছিল। চরম ক্ষমতার অধিকারী ব্রাহ্মহ্মণরা বিলাস ব্যসনে মেতে ওঠেন। তাদের অনাচারে সমাজে দুর্নীতি ও নানা প্রকার বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।

ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় দ্বন্দু: ক্ষত্রিয়রা নতুন নতুন দেশ জয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। দেশের নিরাপত্তা ও শাসনদণ্ড হস্তগত করার পর ক্ষত্রিয়রা ব্রাহ্মণদের আগের ন্যায় আর মন্ত্রীত্বপদ দিতে চাননি কিংবা তাদের একাধিপত্য মেনে নেননি। ফলে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় দ্বন্দু তীব্র হয়ে ওঠে।

ব্রাহ্মণ-বৈশ্য দ্বন্দ্ব: বৈশ্যরা ব্যবসা বাণিজ্য করে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠলেও এবং নিয়মিত কর প্রদান করলেও ব্রাহ্মণরা তাদের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেননি। অথচ কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের শ্রীবৃদ্ধি করেছিল তারাই। দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতি এই সামাজিক অবিচার ও অবজ্ঞা শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণ-বৈশ্য বিবাদকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

মহাবীর ও বুদ্ধদেব: ফলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমগ্র জাতির জীবনে অসন্তোষ দানা বাঁধে। সামাজিক বঞ্চনা ও অবহেলার অগ্নিবলয় ভেদ করে সামাজিক ন্যায় নীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্ররা ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। ক্ষত্রিয় বংশজাত মহাবীর ও বুদ্ধদেব এই বিক্ষুব্ধ সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থনে দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবতরণ করেছিলেন।

 (খ) অর্থনৈতিক কারণ:  খ্রি. পূর্ব পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই কৃষি অর্থনীতির উন্নতি ঘটেছিল। কষি অর্থনীতির মূলে ছিল লোহার তৈরি লাঙ্গলের ফলা ও গো-সম্পদ। তাই মানুষ গোধন সংরক্ষণের প্রতি নজর দেয় এবং পশুবলীর ঘোর বিরোধী হয়ে পড়ে। প্রতিবাদ আন্দোলনের মূলে দুটি ধর্মের (জৈন ও বৌদ্ধ) মূলমন্ত্র ছিল অহিংসা ও জীবে দয়া। এর ফলে মানুষের কাছে ব্রাহ্মাণ্য ধর্মের পরিবর্তে জৈন ও বৌদ্ধধর্ম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

 ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার: কৃষিকর্মের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটেছিল। বৈশ্য সম্প্রদায়ের প্রধান উপজীবিকা ছিল ব্যবসা বাণিজ্য। ব্রাহ্মহ্মণ্যধর্মে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া, টাকা ধারা দেওয়া, সুদ গ্রহণ ইত্যাদি পাপ বলে চিহ্নিত হত। অথচ বাণিজ্যের জন্য এগুলি ছিল অপরিহার্য। সেজন্য বৈশ্যরা চেয়েছিল এমন একটি ধর্ম যা তাদের অর্থনৈতিক প্রাধান্যকে স্বীকৃতি দেবে। তাই বৈশ্যরা জৈন ও বৌদ্ধধর্মকে অকুণ্ঠ সমর্থন করেছিল।

 (গ) ধর্মীয়-দার্শনিক কারণ: ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সংকীর্ণতা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় জীবনে প্রচণ্ড অস্থিরতার সৃষ্টি করেছিল। ধর্মের নামে পশু বলিদানের নিষ্ঠুরতা অনেকের কাছেই অসহনীয় হয়ে ওঠে। এর যৌক্তিকতা সম্বন্ধে প্রশ্ন ওঠে। কর্মফল ও জন্মান্তর থেকে মানুষকে মুক্ত করতে যাগযজ্ঞের ক্ষমতা সম্পদেও প্রশ্ন ওঠে। জন্ম নেয় নতুন দার্শনিক চিন্তা। বৈদিক তত্ত্ব ও অনুষ্ঠানে মানুষ আর সন্তুষ্ট থাকতে। পারে না। এক উচ্চতর জীবনদর্শনের এবং কর্মফল ও জন্মান্তর থেকে মুক্তির জন্য সহজ সরল এক নতুন পথ ও মতের সন্ধান করতে তারা শুরু করে। যন্ত্রের পরিবর্তে তপস্যা, ভক্তি ও অহিংসার প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। ফলে শিথিল হয়ে পড়ে বৈদিক ধর্মমতের প্রভাব। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম।

 মূল্যায়ন: ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিকল্প হিসাবে কমপক্ষে ৬৩টি অব্রাহ্মণ্য ধর্মমতের উদ্ভব হয়েছিল। এদের মধ্যে জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম ছিল প্রধান। এই দুটি ধর্ম ছিল প্রচলিত ধর্মমত বিরোধী আর এদের প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন বর্ণে ক্ষত্রিয়। তাই প্রতিবাদী আন্দোলনকে। ক্ষত্রিয়দের প্রতিবাদ বলে গণ্য করা যেতে পারে।