জনপদ বলতে রাজ্য বা রাষ্ট্র বোঝায় আর মহাজনপদ হল বৃহৎ রাজা বা রাষ্ট্র। মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ছিল উত্তরভারতে, আফগানিস্থান থেকে বিহার পর্যন্ত এলাকার মধ্যে। দক্ষিণভারতে কোনো মহাজনপদ গড়ে ওঠেনি। খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকের প্রথমদিকে মহাজনপদগুলি গড়ে উঠেছিল। জনপদ থেকে কীভাবে মহাজনপদ গড়ে উঠেছিল তার আলোচনা নিম্নরূপ-
(ক) কৃষিকাজে লোহার ব্যবহার: খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকে ভারতে যে রাজনৈতিক প্রগতি ঘটেছিল তা হল জনপদ। অর্থাৎ ছোট ছোট রাজ্য থেকে বৃহৎ রাজ্য মহাজনপদের সৃষ্ট। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে জনপদের সৃষ্টি হয়েছিল আর খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকে লোহার ব্যাপক প্রচলনের ফলে কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ আরো অনেকগুণ বেড়ে রিয়েছিল। বর্তমান বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় লোহার খনি আবিষ্কৃত হওয়ায় লোহা দিয়ে নানা ধরনের কৃষি সরঞ্জাম তৈরি করা শুরু হল। লোহার তৈরি শক্ত হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে পাথুরে ও জংলা জমিকে কৃষিজমিতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছিল। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগেকার তুলনায় খাদ্যশস্য উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল।
(খ) উদ্বৃত্ত ফসল ও তার প্রভাব: উৎপাদন বৃদ্ধি পাবার কারণে উদ্বৃত্ত ফসল সৃষ্টি হয়। উদ্বৃত্ত ফসল মহাজনপদ গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় বাস্তব পরিস্থতির সৃষ্টি করেছিল। কারণ মহাজনপদগুলি গড়ে ওঠে নগরকে কেন্দ্র করে। নগরে বসবাসকারীরা ফসল উৎপন্ন করে না, তারা শিল্পকর্মে নিযুক্ত থাকে এবং ঐসবের বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। তাছাড়া নগরবাসী প্রশাসন ব্যবস্থা এবং তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য কাজ করে। এইভাবে নগরকে কেন্দ্র করে মহাজনপদ সৃষ্টি সম্ভব হয়েছিল। জনপদে নগরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় না।
(গ) বৃহত্তর রাজনৈতিক এলাকা গঠন: কৃষির প্রয়োজনে জনপদে বসবাসকারী উপজাতির মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করত। কিন্তু ঐ সময়ে বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষ লেগেই থাকত। কোনো উপজাতি শক্তিশালী হয়ে উঠে অন্য উপজাতির এলাকা দখল করে নিত। এইভাবে একাধিক জনপদ একত্রিত হয়ে বৃহত্তর জনপদ বা মহাজনপদ গড়ে উঠত। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে তুর্ভস এবং ক্রিভি জনপদ একত্রিত হয়ে পাঞ্চাল দেশ সৃষ্টি হয়েছিল। মহাজনপদ হিসেবে পাঞ্চাল রাজ্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
(ঘ) ভূখণ্ড সম্পর্কে ধারণা: ঋকবেদের যুগে আর্য উপজাতিরা প্রথমে যে বসতি গড়ে তুলেছিল তার কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ছিল না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বসতির পরিবর্তন ঘটত পশুচারণ এবং খাদ্য সংগ্রহের প্রয়োজনে। মানুষ তখন উপজাতি বা 'জন'-র প্রতি অনুগত ছিল। জনপদের যুগে কৃষিকাজের প্রয়োজনে লোকেরা এক জায়গায় যখন দীঘদিন ধরে বসবাস করতে থাকে তখন তাদের আনুগত্য ছিল জনপদের প্রতি। কৃষিকাজে উন্নত হাতিয়ার ব্যবহারের ফলে যখন উদ্বৃত্ত ফসল পাওয়া গেল, নগরকে কেন্দ্র করে শিল্পকর্ম শুরু হল, তখন ভূখণ্ড সম্পর্কে ধারণা মানুষের মধ্যে জোরদার হতে থাকে। বৃহত্তর এলাকা নিয়ে মহাজনপদ গড়ে উঠলে ভূখণ্ডের প্রতি আনুগত্যও বাড়তে থাকে। অর্থাৎ মানুষের নিজ নিজ রাজ্য বা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার প্রতি আনুগত্য সৃষ্টি হয়।
ষোড়শ মহাজনপদের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো বা, অবস্থার বিবরণ দাও।
খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকে উত্তরভারতের রাজনীতি ১৬টি মহাজনপদকৃেত্তও এক করেই আবর্তিত হয়। সেই কারণে ওই সময়কার রাজনীতি ও প্রশাসনের ইতিবৃত্ত এবং মহাজনপদগুলির বৈশিষ্ট্য সমার্থক। বৈশিষ্ট্যগুলিকে এইভাবে সাজানো যেতে পারে।
(ক) রাজনৈতিক অনৈক্য: জনপদের আমলে ছোট ছোট এলাকায় যে রাজ্য বা জনপদ গড়ে উঠেছিল ওইসবের এলাকা সব সময়ে নির্দিষ্ট থাকত না। একটি উপজাতি শক্তিশালী হয়ে উঠে অন্য উপজাতির এলাকা দখল করে নিত। মহাজনপদগুলি ওইভারে জন্ম নিয়েছিল। মহাজনপদগুলির মধ্যেও কোনো একতা ছিল না। উত্তরভারতে এতগুলে রাজ্যের অস্তিত্ব থেকে অনৈক্যের চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোনো কেন্দ্রীয় শক্তির অবর্তমানে মহাজনপদগুলি সর্বদাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকত।
(খ) রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতা: ষোড়শ মহাজনপদগুলির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল ওইসবের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতা। ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে ক্রমে চারটি-কোশল, মগধ, অবন্তী ও বৎস প্রাধান্য অর্জন করে। এদের মধ্যে প্রথমে কোশল রাজ্য প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই রাজ্যটি যবনিকার অন্তরালে চলে গিয়ে মগধের উত্থানের পথ পরিষ্কার করে। অবন্তী ও বৎস রাজ্য দুটি প্রভাব প্রতিপত্তি উত্তরভারতে সুবিদিত ছিল। কিন্তু মগধের সঙ্গে তারাও এঁটে উঠতে পারেনি। প্রায় একশো বছর ধরে প্রতিদ্বন্দিতা চলবার পরে শেষ পর্যন্ত জয় হয় মগধের। মগধের রাজ্য বিম্বিসার যে সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেছিলেন মোর্য সম্রাট অশোকের আমলে তা বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্যে পরিণতি লাভ করেছিল।
(গ) রাজতন্ত্র এবং গণমূলক শাসন: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আরও একটি গুরুত্বপূর রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ছিল রাজতন্ত্রের পাশাপাশি গণরাজ্য বা গোষ্ঠীরাজ্য-এর অবস্থান। অর্থাৎ একই সময়ে কোনো কোনো রাজ্যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, আবার অন্যগুলিয়ে গণমূলক শাসন বা প্রজাতন্ত্র। অবশ্য সংখ্যার দিক থেকে গণরাজ্য ছিল কম আ রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল অনেক বেশি। গাঙ্গেয় সমভূমিতে যেসব রাজ্য গড়ে উঠেছিল সেইগুলি ছিল রাজতান্ত্রিক। গণরাজ্যগুলি প্রতিষ্ঠিত ছিল উত্তরভারতে হিমালয়ে পাদদেশে থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে। তাছাড়া গণরাজ্যগুলির প্রত্যেকটিা ভৌগোলিক সীমা ছিল ছোট। কিন্তু রাজতান্ত্রিক রাজ্যগুলির ভৌগোলিক সীমা ছিল অপেক্ষাকৃত বড়।
(ঘ) গণমূলক শাসনের দুর্বলতা: ষোড়শ মহাজনপদ যুগের অন্য একটি রাজনৈতি বৈশিষ্ট্য হল সেই সময় গণমূলক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তার পরিবা একচ্ছত্র রাজতন্ত্র দ্রুতগতিতে প্রচলিত হচ্ছিল। অর্থাৎ ষোলটি মহাজনপদের সবকারি প্রথমদিকে গণ বা গোষ্ঠীমূলক রাজ্য ছিল। কিন্তু বুদ্ধের সমসাময়িক যুগে এইগুলির শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছিল। এই অবস্থায় কোনো না কোনো মহারাজা ওইগুলির অধিকাংশ জয় করেছিলেন। গণরাজ্যগুলিকে প্রজাতন্ত্র বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী এবং বৌদ্ধগ্রন্থ মঝঝিমণিকায় গণরাজ্য ও সংঘরাজ্য দুটি কথা একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষক ঐতিহাসিক উপিন্দর সিং গণরাজ্যকে প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে গোষ্ঠীতন্ত্র বলেছেন। কেবল মল্ল ও বৃক্তিরাই তাদের গণ কিংবা গোষ্ঠীতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল। সহ-অবস্থান সত্ত্বেও রাজতন্ত্র ও গোষ্ঠীতন্ত্রের শাসনব্যবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল।
মগধের উত্থান ও সাফল্যের কারণগুলি আলোচনা করো।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গড়ে ওঠা ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে শৈষ পর্যন্ত মগধ অন্যান্যদের পরাস্ত করে এক সাম্রাজ্যের সূচনা করতে পেরেছিল। বিম্বিসার মগধ পত্তনের সূচনা করেন।উত্থান ও সাফল্য: মগধের উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এর মূলে ছিল নিম্নলিখিত কারণ-
(১) ভৌগোলিক অবস্থান: গঙ্গা, শোন ও চম্পা নদী বেষ্টিত মগধ ছিল অতি সুরক্ষিত। মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ পাঁচটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় খুবই নিরাপদ ছিল। গঙ্গা, শোন ও গণ্ডক নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র কার্যত দুর্ভেদ্য ছিল। চতুর্দিক নদী থাকায় শত্রু দ্বারা পাটলিপুত্রের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ছিল খুবই কম, তেমনি নদীপথ ধরে মগধের সেনাবাহিনী অবাধে চতুর্দিকে চলাফেরা করতে পারত।
(২) নিরাপদ দূরত্ব অনিশ্চিত ও উপদ্রুত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বহুদূরে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় অবস্থিত মগধের অধিবাসীরা নিরাপদ জীবন যাপন করত। বহিরাগত কোনো শক্তির পক্ষে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে, মগধে পৌঁছানো সহজসাধ্য ছিল না। সিন্ধু উপত্যকা থেকে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকা মগধে এনে বসতি স্থাপন করতে আর্যদের কম পক্ষে দু'হাজার বছর সময় লেগেছিল। বিদেশি পারসিক ও ম্যাসিডোনীয় বাহিনীর পক্ষে এত দূরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দূরত্বজনিত নিরাপত্তার ফলে মগধের উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।
(৩) যোগ্য নেতৃত্ব: বিম্বিসার, অজাতশত্রু, শিশুনাগ, মহাপদ্ম নন্দ, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোকের মতো সমরকুশলী, দক্ষ ও উদ্যমী নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে অজাতশত্রুর মন্ত্রী বাসসাকর, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মন্ত্রী কৌটিল্য এবং অশোকের মন্ত্রী রাধাগুপ্তের মতো বিখ্যাত কুটনীতিবিশারদ মন্ত্রীদের ভূমিকাকে কোনক্রমেই উপেক্ষা করা চলে না। মন্ত্রীদের কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং রাজন্যবর্গের শৌর্যবীর্যের সমন্বয় মগধকে অপ্রতিহত করে তোলে।
(৪) উর্বর কৃষি জমি: গঙ্গা নদী ছিল মাতাদের হৃৎপিণ্ড। গঙ্গা ও অন্যান্য নদীগুলি মগধকে উর্বরা এবং সুজলা সুফলা করেছেন সেই অঞ্চলে নানা জাতের প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপন্ন হত। বছরে দুবার জমিতে ফসল উৎপন্ন হত। উদ্বৃত্ত কৃষি উৎপাদনের দ্বারা বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ সহজতর হয়। তাছাড়া ফসল উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে যথেষ্ট রাজস্ব আদায় করতে কোনো অসুবিধা হত না। ফলে রাজকোষের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল।
(৫) খনিজ সম্পদ: মগধে অফুরন্ত খনিজ সম্পদ পাওয়া যেত। মগধের লোহা ও তামা কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাণে ব্যবহৃত হত। তাছাড়া তামা ও লোহা দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা হত। মগধের লোহার খনিগুলি তার সামরিক শক্তির গর্ভগৃহ ছিল।
(৬) অরণ্য সম্পদ: মগধের পূর্বাঞ্চলে ছিল হস্তিসংকুল ঘন অরণ্য। এই অরণ্য। ভেদ করে শত্রুর পক্ষে মগধ আক্রমণ করা দুঃসাধ্য ছিল। ঐ অরণ্য থেকে হস্তি সংগ্রহ করে নন্দ রাজারা বিশাল রণহস্তিবাহিনী গড়ে তুলেছিল। মগধের সেনাবাহিনীর প্রধান অঙ্গ ছিল হস্তিবাহিনী। ধননন্দের রণহস্তি বাহিনীর ভয়েই বোধহয় গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয়ী সেনাদল মগধের দিকে অগ্রসর হতে অস্বীকার করে।
(৭) বৈদেশিক বাণিজ্য: মগধের বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল সমৃদ্ধ। গঙ্গার পথ ধরে মগধের বণিকরা বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ ভারত ও দূর প্রাচ্য পাড়ি দিত। জলপথ ছাড়াও স্থলপথে মগধের বণিকরা কাশ্মীর ও গান্ধারে বাণিজ্য চালাত।
(৮) মিশ্র সংস্কৃতি মগধের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার রাজনৈতির দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত করে। মগধের সীমানার দুই পাশে ছিল আর্য ও অনার্য দুই পৃথক সংস্কৃতির আবাসস্থল। এর ফলে মগধে এক মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই মিশ্র সংস্কৃতিতে মানুষের চিত্ত উদার ও উন্নত হয়। ব্রাহ্মণ্যধর্মের কঠোরতা অনেকটা শিথিল হয়ে গিয়েছিল। আর্য মানসিকতা ও অনার্য বাহুবলের মিলনে মগধ শক্তিশালী। হয়ে ওঠে।
(৯) আদর্শবাদ: যুগ যুগ ধরে ভারতীয় রাজন্যবর্গ এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখতেন। তারা সম্রাট, বিরাট, সার্বভৌম, রাজ চক্রবর্তী প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতেন। মগধের রাজন্যবর্গও এই আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশোকের আমলে এই আদর্শ পূর্ণতা পায়।
(১০) সামরিক শক্তি: মগধের প্রাকৃতিক সম্পদ, অধিক কৃষি উৎপাদন রাজকোষের আর্থিক শক্তিবৃদ্ধি প্রভৃতির ফলে রাজারা এর ওপর ভিত্তি করে এব বিরাট সেনাদল গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। এই সামরিক শক্তি মগধের উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
মূল্যায়ন: সুতরাং আর্যাবর্তে রাজনৈতিক প্রাধান্য লাভের সংগ্রামে মগধের সাফল্য অর্জন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বিভিন্ন কারণ পৃথকভাবে বা যুগ্মভাবে মগধের ৬৫ উত্থানকে সম্ভব করে তোলে। মগধ সাম্রাজ্য ধাপে ধাপে ভারত সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।